বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকার (১৫) সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন মো. ইজাদুল হক ওরফে রতন (২১) নামে এক পুলিশ সদস্য। উপস্থিত বুদ্ধির জোরে বিষয়টি বুঝতে পারে ওই কিশোরী।
পরে রতনকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার শুরু করে সে। বাড়ির লোকজন আওয়াজ শুনতে পেয়ে তার ঘরে এসে রতনকে আটকে ফেলে। তাদের খবরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বৃ-দেবস্থান গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল হক ও মো. ইস্রাফিল হোসেন সেখানে এসে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রতনের কিছু সহযোগী সেখানে এসে হামলা করে।
হামলার ঘটনায় দুই ইউপি সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন। এ সংবাদ পেয়ে স্থানীয় রাজিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতাব্বিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশে খবর দেন।
পরে পুলিশ সদস্যরা এসে মো. ইজাদুল হক ওরফে রতনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।
পরে রতনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হবে।
গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্য মো. ইজাদুল হক ওরফে রতন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে। ধর্ষণের শিকার মাদ্রাসাছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, একটি ভুল নম্বরে কলের কারণে রতনের সঙ্গে কিশোরীর পরিচয় হয়।
ধীরে ধীরে তারা প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। রতন গাজীপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরিরত। এক মাস আগে তিনি বাড়িতে ছুটিতে আসেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রতন তার প্রেমিকার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে সন্ধ্যার পর তার বাড়িতে যান। সেখানে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
কী হয়েছিল
ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে রতন তাকে কল করে ঘরের বাইরে আসতে বলেন। রাত ৮টার দিকে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখান। বৃহস্পতিবার বিয়ে করবেন কথা দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে চান। কিশোরী প্রথমে রাজি না হলেও রতনের অভিমান ও ভালোবাসার জোরের উপর রাজি হয়। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের পর রতন চলে যেতে চাইলে ভুক্তভোগী তাকে বিয়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করে।
এ সময় রতন ‘এখনই বিয়ে করলে চাকরির সমস্যা হবে’ বলে জানিয়ে এক বছর পরে বিয়ের আশ্বাস দেখায়। রতন প্রতারণা করছেন বুঝতে পেরে ওই মাদ্রাসাছাত্রী তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার শুরু করে। এ সময় তার পরিবারের লোকজন রতনকে আটকে ফেলে।
পরে কিশোরীর পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানান বৃ-দেবস্থান গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য সামছুল হক ও মো. ইস্রাফিল হোসেনকে। তারা বিষয়টি সুরাহা করার প্রস্তুতি নিলে রতন তার কয়েকজন সহযোগীকে সেখানে ডাকেন। আলোচনার এক পর্যায়ে রতনের সহযোগীরা উপস্থিত সকলের উপর হামলা করে। এতে সামছুল হক ও মো. ইস্রাফিল হোসেনসহ পাঁচজন আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন রাজিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতাব্বিরুল ইসলাম। তিনি হামলার ঘটনা ও পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য পুলিশে খবর দেন। ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে রতনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
চেয়ারম্যান মোতাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ‘হামলা কথা শুনে ঘটনাস্থলে এসেই আমি পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। পরে সামছুল হক ও মো. ইস্রাফিল হোসেনের কাছে সবকিছু শুনে পুলিশে খবর দেই। তারা দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আটক পুলিশ সদস্যকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মেয়ের বাবা একটি মামলাও করেছেন।’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আটক রতনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত জারি আছে। ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে তার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’